তিস্তা নদীর উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি আসার কারণে বাড়তে শুরু করেছে নদীর পানি প্রবাহ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পানি প্রবাহ বর্তমানে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে এবং আরও পানি আসার পূর্বাভাস রয়েছে।
শনিবার (১ জুন) সকাল থেকে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের ফলে উজানে পানি জমে তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে। এতে করে নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টা থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪৪টি গেট খোলা হয়েছে। এতে করে নদীর পানি নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আশপাশের এলাকা আপাতত নিরাপদ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে আরও গেট খোলা হবে।
স্থানীয়দের মধ্যে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকার মানুষজন তাঁদের বাড়িঘর ও মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের জানান, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখনো বড় কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই, তবে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে, যার ফলে তিস্তা ও এর আশপাশের নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে পারে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করলেও প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নদীর পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গেট খোলার এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নদী ব্যবস্থাপনায় আরও পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
