জামালপুর জেলায় নতুন একটি গ্যাস খনির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে আশার আলো জাগিয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) সম্প্রতি জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় চালানো এক জরিপে এই সম্ভাব্য গ্যাস ক্ষেত্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাপেক্স-এর কর্মকর্তারা জানান, আধুনিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও সিসমিক ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে জামালপুরের মাটির নিচে গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এখানে গ্যাসের একটি বড় ভাণ্ডার থাকতে পারে, যার গভীরতা প্রায় ৩,২০০ মিটার। এখন পর্যন্ত একটি কূপ খননের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই খনন কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানান, “জামালপুরে নতুন এই গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান আমাদের দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকে সহায়তা করবে না, বরং স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।”
স্থানীয় জনগণের মধ্যেও এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। মাদারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা আশাবাদী যে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলে এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমে আসছে। এ অবস্থায় নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া অত্যন্ত সময়োপযোগী। তারা বলছেন, এই খনি সফলভাবে উত্তোলনযোগ্য হলে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে যুক্ত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও গৃহস্থালি কাজে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যাবে।
তবে, পরিবেশবিদরা গ্যাস উত্তোলনের সময় পরিবেশগত ঝুঁকি ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা আশা করছেন, সরকার ও বাপেক্স পরিবেশবান্ধব এবং স্থানীয় জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ পরিচালনা করবে।
এই নতুন আবিষ্কার জামালপুরকে দেশের গ্যাস মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে এসেছে। এখন নজর থাকবে গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়া ও এর অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রভাবের দিকে। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়, তবে এটি হতে পারে দেশের জ্বালানি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা।