দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি এক সরাসরি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হওয়া নির্বাচনের দুর্নীতির সাক্ষী, এমনকি কিছু কিছু অংশে নিজের অজান্তেই অংশগ্রহণকারী ছিলাম।” তার এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনা সৃষ্টি করেছে, কারণ সাধারণত শোবিজ অঙ্গনের তারকারা রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
বাঁধন বলেন, “আমাদের অনেকেই ভেবেছিলাম যে পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়াচ্ছি, কিন্তু পরে বুঝেছি, যাদের হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, তারাও ছিল এক অন্য রকম দুর্নীতির মুখ। তখন না বুঝে হয়তো কিছু প্রচার বা বক্তব্য দিয়েছিলাম যেগুলো নিরপেক্ষ ছিল না।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি এখন রাজনীতি করি না, করতেও চাই না। কিন্তু সত্য কথা বলার দায় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারি না।”
এই বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নানা অনিয়ম, প্রভাব খাটানো ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জানান, “২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়া এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের ব্যবহার করা হয়েছে একটি প্রভাব তৈরির জন্য। তখন আমরা অনেকেই না বুঝেই সেই জালে পা দিয়েছি।”
বাঁধনের এই বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, তার মতো একজন সচেতন, শিক্ষিত এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব যদি প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করেন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে বড় একটি বার্তা বহন করে। সামাজিক মাধ্যমজুড়ে অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সাহসী বক্তব্যের জন্য।
তবে কিছু মহল থেকে বাঁধনের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনাও এসেছে। কারও মতে, একজন বিনোদনজগতের মানুষকে রাজনীতিতে না জড়ানোই ভালো। কেউ কেউ এটিকে “প্রচারমূলক” বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে বাঁধন সোজাসাপ্টা বলেন, “আমি যা বলেছি, তা আমার অভিজ্ঞতা। কারও মনে কষ্ট দিলে দুঃখিত, কিন্তু সত্যকে আর চাপা দিতে পারছি না।”
বর্তমানে বাঁধন সামাজিক সচেতনতা ও নারী অধিকার নিয়েই বেশি কাজ করছেন। তার মতে, "গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও। আর সেই স্বাধীনতাই যদি কেড়ে নেওয়া হয়, তবে আমরা সবাই এক ধরনের প্রতারণার অংশীদার হয়ে যাই।"
এই বক্তব্য আরও একবার প্রমাণ করল, আজমেরী হক বাঁধন শুধু একজন অভিনয়শিল্পী নন, একজন সচেতন নাগরিকও। তিনি যখন মুখ খোলেন, তা শুধু বিনোদনের খবর হয় না, সামাজিক দিক থেকেও তা রেখে যায় গভীর প্রভাব।