দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই ভারতকে নতুন শর্ত দিয়েছে পাকিস্তান। সম্প্রতি ইসলামাবাদ জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি না হলে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন সম্ভব নয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক ডার এক বিবৃতিতে বলেন, ভারত যদি জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন পুনর্বহালের পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আলোচনার টেবিলে বসার কোনো অর্থ নেই।
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা চলছিল। কিন্তু পাকিস্তান আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল, কাশ্মীর ছাড়া কোনো আলোচনাই তারা ফলপ্রসূ বলে মনে করে না।
২০১৯ সালে ভারতের মোদি সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (অনুচ্ছেদ ৩৭০) বাতিল করার পর থেকেই পাকিস্তান কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে। তখন থেকেই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পাকিস্তান ওই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে এবং দাবি করে, এটি জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
পাকিস্তানের নতুন এই শর্তকে ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে ভারতের আগের অবস্থান অনুযায়ী, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তা নিয়ে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ বা আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই নতুন শর্ত মূলত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন হারানোর আশঙ্কা এবং চীন ও আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়েই ইসলামাবাদ এই ধরনের অবস্থান নিচ্ছে। অন্যদিকে ভারত এখন বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যস্ত এবং এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ তেমন দেখা যাচ্ছে না।
এই পটভূমিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে পাকিস্তান যেভাবে নতুন করে শর্ত দিচ্ছে, তাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করেই যে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারো সংঘাতের পথে যেতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মহলেরও নজর রয়েছে দুই দেশের নীতিগত অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক পদক্ষেপের দিকে।