ইরানের পক্ষ নিল আরও এক মুসলিম দেশ

0


 মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম বিশ্বের চলমান জটিল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণা দিয়েছে আরেকটি মুসলিম দেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ নতুন এক মিত্রতা গড়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।


বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে ইরান দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান কূটনৈতিকভাবে নিজের প্রভাব বলয় বিস্তারে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ ওমান।


ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করা হবে এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা খাতেও যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই তেহরান সফর করে ইরানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই দেশের মধ্যে নতুন বাণিজ্য চুক্তি ছাড়াও সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এবং ওমানের ঘনিষ্ঠতা বিশেষভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলের শক্তির সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে ইরান-সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং আরব লিগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনের মতো ঘটনাগুলো মুসলিম বিশ্বের ঐক্য পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন সময়ে ওমানের এ সিদ্ধান্ত পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর জন্যও নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


অন্যদিকে, এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কারণ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ রয়েই গেছে। ওমানের মতো দেশ ইরানের ঘনিষ্ঠ হলে পারমাণবিক ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ কমতে পারে এবং ইরান আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে।


এ বিষয়ে ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘ওমানের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন নয়। তবে নতুন মাত্রায় এই সম্পর্ক উন্নীত হলে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে। এটি কেবল অর্থনৈতিক বা সামরিক সহযোগিতার সীমায় আবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’’


ওমানের সাধারণ জনগণও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির কয়েকজন নাগরিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘এটি আমাদের দেশের জন্য ভালো পদক্ষেপ। প্রতিবেশী মুসলিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে উন্নয়ন ও শান্তি নিশ্চিত হবে।’’


তবে এ সম্পর্ক কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা সময়ই বলে দেবে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই নতুন মিত্রতা মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের বার্তা দেবে, যা ইরানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গেই পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।


সব মিলিয়ে ওমানের এই সিদ্ধান্ত শুধু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করবে না, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বে নতুন এক জোট ও শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ইরানের অবস্থানকে আরও মজবুত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top