চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে আবারও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে এক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। শনিবার ভোররাতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্ত এলাকায়। নিহত ব্যক্তি হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার মো. মিজানুর রহমান (৩২), তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভোররাতে সীমান্তবর্তী মাসুদপুর এলাকার ৩/৪ জন বাংলাদেশি গরু আনতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। এ সময় ভারতের মোহদিপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে মিজানুর রহমান গুরুতরভাবে আহত হন। সঙ্গীরা তাকে দ্রুত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসলেও ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএসএফ প্রায়শই সীমান্তে অতর্কিতে গুলি চালায়, এমনকি বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্যাতনের ঘটনাও নতুন নয়। এবারও বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়ে একজন নিরীহ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শহিদুল ইসলাম জানান, "ঘটনাটি আমরা অবগত হয়েছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে পতাকা বৈঠকের জন্য বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এদিকে মিজানুরের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবার ও এলাকাবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিনিয়ত এমন হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরেই সীমান্তে বিএসএফ গুলিতে কমপক্ষে ১২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটে গরু পাচারের অভিযোগে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিরীহ নাগরিকরাও এর শিকার হচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বারবার কূটনৈতিক আলোচনার পরও বিএসএফের আচরণে পরিবর্তন না আসায় দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার এ ধরনের ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করলেও, সাধারণ মানুষ চায় এবার যেন কড়া প্রতিবাদ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারকে এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হতে না হয়।