বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনা। বিরোধী দল ও সরকারবিরোধী মহলে এটি বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছে। তবে বিষয়টি ঘিরে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি, কারণ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং সাংবিধানিকভাবে দায়মুক্তির অধিকারপ্রাপ্ত।
সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি একটি আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলার শুনানিকালে মামলার বাদীর অনুপস্থিতি এবং পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। মামলাটি অনেক আগের এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দাখিল হওয়া এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে একটি প্রকল্পে দুর্নীতি করেছেন। তবে মামলার অধিকাংশ নথিপত্রই এখন পর্যন্ত বিচারাধীন রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
সরকারপক্ষ বলছে, এটি একটি বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন প্রচারণা। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনাকে হেয় করার জন্য এবং দেশে অস্থিরতা তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা বা তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করাকে সংবিধান পরিপন্থী বলে গণ্য করা হয়, যদি না রাষ্ট্রপতির অনুমতি থাকে।
অন্যদিকে, বিএনপি ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো এই ঘটনাকে ‘ন্যায়বিচারের বিজয়’ হিসেবে দেখছে। তারা বলছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে যে সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর বিচার হওয়া দরকার। তারা এও দাবি করছে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মাধ্যমে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
এদিকে, দেশের সাধারণ মানুষ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে একে আইনের অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন দীর্ঘদিন পর হলেও দুর্নীতির বিচার হওয়া উচিত।
সরকারি ও আদালতপক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি, তবে আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে পরোয়ানাটি বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
এই ঘটনার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এমন ঘটনা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, এই পরোয়ানা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব এবং এর পেছনে প্রকৃত সত্য কী।