বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিএনপির এক সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ঘিরে। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য ও গণতন্ত্র রক্ষায় আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি। বিএনপির দাবি, বর্তমান সরকার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে জনগণের অধিকার হরণ করেছে। তাদের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রবিরোধী এবং সংবিধানের পরিপন্থী। তারা যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে, তাতে করে দেশ এক প্রকার পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপি-ই প্রথম সাহস করে বলেছে, এই দলের কর্মকাণ্ড দেশের জন্য হুমকি। তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।”
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ বারবার সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে নিজেদের স্বার্থে আইন প্রয়োগ করছে। তারা বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, বিরোধী মত দমন করছে এবং দেশের অর্থনীতি দুর্নীতির জালে জড়িয়ে ফেলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিএনপি ভবিষ্যতে আইনি ও রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে নেবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে এখন চরম হতাশায় ভুগছে। তাই তারা উগ্র ও অগণতান্ত্রিক বক্তব্য দিচ্ছে। যারা নিজেরাই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তাদের মুখে এই কথা শোভা পায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। বিএনপি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন রাজনৈতিক বিভাজন ও বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই বক্তব্য তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে, যার মাধ্যমে তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সংলাপ বা সমঝোতার পথকে আরও সংকীর্ণ করে তুলতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
আপাতত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিতর্ক তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামনে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও অন্যান্য জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রেক্ষিতে এই বক্তব্য কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।