প্রথমেই বলা যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। শেখ হাসিনার সরকারকে একাধিকবার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, কিংবা বেআইনি আটক—এমন অভিযোগ বহুবার উঠেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে অনেক বিরোধী নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যার দায় সরকার এড়িয়ে গেলেও পরিবারগুলো আজও ন্যায়বিচার পায়নি।
দ্বিতীয়ত, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগও কম নয়। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়, কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার—এসব নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা বলেন, সরকার বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করছে।
তৃতীয়ত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। যদিও শেখ হাসিনা নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকার দাবি করেছেন, তবে তার দলের বহু নেতা, এমনকি পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন বন্ধ করেছিল ঘুষ কেলেঙ্কারির আশঙ্কায়। পরে যদিও নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়, তবে এই ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চতুর্থত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ। বর্তমান সরকার মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নানা আইন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি বিতর্কিত আইন হিসেবে পরিচিত, যার মাধ্যমে বহু সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। অনেকে বলছেন, এই আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভিন্নমত দমন করা হচ্ছে।
পঞ্চমত, নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়ম, কারচুপি ও ভুয়া ভোটের অভিযোগ রয়েছে। বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচন এক তরফা হয়ে পড়ে। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগ উঠেছে, যা গণতন্ত্রকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
শেখ হাসিনার অর্জন অস্বীকার করা যায় না, তবে তার শাসনামলে এসব অপকর্ম ও বিতর্ক রাজনীতিতে গভীর দাগ ফেলে গেছে। এসব ঘটনা জানলে সাধারণ মানুষ চমকে উঠতে বাধ্য।