ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশে ট্রেনের টিকিটের জন্য যাত্রীদের বিপুল আগ্রহ ও চাহিদার অভাবনীয় এক চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাত্র ১৭ হাজার টিকিটের জন্য রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেমে এক দিনে ২ কোটি ৭৬ লাখ বার চেষ্টা করা হয়েছে! এই অভাবনীয় চেষ্টার ফলে অনেকেই টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ মে ঈদযাত্রার আগাম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন সকাল ৮টায় টিকিট সিস্টেম খুলে দেওয়া হয়। সেদিন ১৭ হাজার ২০০টি টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। কিন্তু এত বিপুল চাহিদার কারণে সার্ভার বারবার ধীর হয়ে যায় এবং অনেক ব্যবহারকারী লগইন করতেই পারেননি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেদিন ই-টিকিটিং সিস্টেমে মোট ২ কোটি ৭৬ লাখ হিট পড়ে, যা একটি রেকর্ড।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক ব্যবহারকারী একাধিকবার চেষ্টা করেছেন, অনেকেই আবার বিভিন্ন ডিভাইস ও অ্যাকাউন্ট থেকে লগইন করেছেন টিকিট পাওয়ার আশায়। ফলে মোট হিট সংখ্যা এত বেশি দাঁড়িয়েছে। তবে এই বিপুল চেষ্টার বিপরীতে টিকিট পেয়েছেন মাত্র ১৭ হাজার যাত্রী। ফলে বাকি লক্ষাধিক মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন কাঙ্ক্ষিত টিকিট থেকে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, "ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও টিকিট পাওয়া যায়নি। সার্ভার বারবার ক্র্যাশ করেছে।"
বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং সিস্টেমটি পরিচালনা করছে 'sohoz' নামক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সিস্টেমকে আরও দক্ষ ও স্থিতিশীল করতে তারা আপডেট ও মেইনটেন্যান্স কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণের চোখে এটি এখনও কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঈদযাত্রার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রেলের প্রস্তুতি আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল। আগাম চাহিদা বুঝে আরও বেশি টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা, সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভিন্নপথে টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হলে হয়তো এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।
বর্তমানে যারা টিকিট পাননি, তারা হতাশ হলেও রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, পরবর্তী ধাপে যারা টিকিট পাননি তাদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করলো, বাংলাদেশে ঈদ মানেই ঘরে ফেরার যুদ্ধ—আর এই যুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন হলো একটি ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা।