বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৬০০টিরও বেশি হত্যা মামলার কোনো একটিরও তদন্ত শেষ করতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব মামলার অধিকাংশই দায়ের হয়েছে বিগত এক দশকের মধ্যে, যার পেছনে রাজনৈতিক সহিংসতা, সংঘর্ষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। যদিও এই মামলাগুলোর বেশিরভাগই বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে আনা হয়েছে, তথাপি এত সংখ্যক মামলার তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকাটা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব মামলার সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। তারা দাবি করছে, সরকার এ ধরণের মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে ব্যবহার করছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও বাংলাদেশে আইনের শাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। নিহতদের পরিবারগুলো বছরের পর বছর ধরে ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষা করলেও, মামলাগুলোর তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মামলার অধিকাংশই 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' এবং নির্ভরযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এসব মামলা ধামাচাপা দিয়ে রাখছে যাতে সত্য বের না হয়ে আসে।
বিরোধী দল বিএনপি’র এক সিনিয়র নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এতো হত্যা মামলা থাকার পরও কোনোটির তদন্ত শেষ না হওয়া বিচার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। এটা প্রমাণ করে দেশে প্রকৃত বিচার নেই, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই প্রাধান্য পাচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেকেই বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশের গণতান্ত্রিক ও বিচারিক কাঠামোতে জনগণের আস্থা আরও কমে যাবে।
আপাতত, এই মামলাগুলোর কোনো নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের আশা ক্ষীণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এই ৬০০ মামলা এখন যেন শুধুই সংখ্যার খেলা, যেখানে ন্যায়বিচার কেবল একটি আশা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে।