বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন। সম্প্রতি এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তার এ অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা।
ইলিয়াস কাঞ্চন এক সময় ছিলেন রূপালী পর্দার নায়ক, কিন্তু বহু বছর ধরে তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে তিনি এই ইস্যুতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু এবার তার সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া অনেককেই বিস্মিত করেছে।
একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর ওপর দমনপীড়ন চলছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী আন্দোলনের অংশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।” তিনি আরও বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নই, আমি শুধু চাই মানুষের অধিকার নিশ্চিত হোক, গণতন্ত্র ফিরুক।”
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের একাত্মতা এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কারণ তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনের বাইরের একজন পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। এতে করে সাধারণ জনগণের মাঝে আন্দোলনটি নিয়ে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, তার মতো ব্যক্তি যখন প্রকাশ্যে আওয়াজ তুলছেন, তখন বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে। দলটির কয়েকজন নেতা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “ইলিয়াস কাঞ্চন একজন শিল্পী, তিনি রাজনীতির বিষয়ে না বুঝে মন্তব্য করছেন। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো কোনো যৌক্তিকতা নেই।” তবে এসব বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চনকে থামানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের একাত্মতা যতটা না রাজনৈতিক অর্থে গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটি একটি প্রতীকী বার্তা হিসেবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যখন দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছে, তখন তা শাসক দলের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়ায়।
এখন সবার নজর এই আন্দোলনের ভবিষ্যতের দিকে। ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো ব্যক্তিত্বদের যুক্ত হওয়া কি আন্দোলনটিকে আরও বেগবান করবে, নাকি ক্ষমতাসীনরা কঠোর অবস্থান নেবে—এটি সময়ই বলে দেবে। তবে ইতিমধ্যেই এ ঘটনা দেশের রাজনীতিতে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।