বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, পুরাতন ধারার রাজনীতি দেশের অগ্রগতির পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দশক ধরে চলে আসা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার প্রবণতা এবং দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার সংস্কৃতি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক উন্নয়নকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনীতিতে নতুন চিন্তাধারা, তরুণ নেতৃত্ব ও গণমুখী কার্যক্রম ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজনীতি দেশ পরিচালনার ভিত্তি হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চার অভাব ছিল। বহুবার দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রের সংবিধান ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে, যা সাধারণ জনগণের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।
দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, মেধার পরিবর্তে চাটুকারিতার মূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু হিসেবে দেখা—এসবই পুরোনো ধারার রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। এই ধরনের রাজনীতি দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতির প্রতি বিরাগ সৃষ্টি করছে। ফলে, সমাজে একধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটছে, যা ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন সময় এসেছে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নতুনভাবে ভাবার। দুর্নীতিমুক্ত, জবাবদিহিমূলক এবং গণতন্ত্রভিত্তিক রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। তরুণদের নেতৃত্বে এনে, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে আধুনিক রাজনীতির মডেল তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন জরিপেও দেখা গেছে, দেশের সাধারণ মানুষ রাজনীতির পুরাতন ধারা নিয়ে হতাশ। তারা পরিবর্তন চায়—যে পরিবর্তনে থাকবে স্বচ্ছতা, সেবা ও জাতীয় স্বার্থ। বর্তমান প্রজন্ম রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শুধু এই কারণে যে তারা রাজনীতিকে ক্ষমতার খেলা হিসেবে দেখছে, জনসেবার মাধ্যম হিসেবে নয়।
পরিশেষে বলা যায়, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন এক নতুন ধারা—যেখানে রাজনীতি হবে দেশের সেবা ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। পুরাতন রাজনীতির জড়তা থেকে মুক্ত না হলে, আমাদের ভবিষ্যৎ বারবার বাধাগ্রস্ত হবে। তাই আজকের দাবি—নতুন চিন্তা, নতুন নেতৃত্ব, এবং একটি নতুন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি।