ঢাকা আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী

0

 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই ঢাকা সফরে আসছেন। এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং অভিবাসন নিয়ে আলোচনাই হবে এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি এই সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ঢাকা সফরের জন্য সম্মতি দিয়েছেন এবং উভয় দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে সফরের সময়সূচি ও কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। এটি হবে প্রায় দুই দশকের মধ্যে কোনো ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর। এর আগে কেবলমাত্র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল দুই দেশের সম্পর্ক। এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।


বাংলাদেশের জন্য এই সফরের তাৎপর্য অনেক। ইতালি ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শক্তি এবং সেখানে বসবাসরত প্রায় ১ লক্ষ বাংলাদেশি অভিবাসীর জীবিকা ও অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ইতালিতে কর্মসংস্থান খাতে বাংলাদেশিদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এছাড়া বৈধতার বাইরে থাকা অভিবাসীদের বৈধতা প্রদান বা প্রক্রিয়াটি সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।


অর্থনৈতিক দিক থেকেও এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ মূলত গার্মেন্টস ও হস্তশিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করে ইতালিতে। অন্যদিকে, ইতালি থেকে যন্ত্রপাতি, ওষুধ ও উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি যৌথ বিনিয়োগ এবং শিল্প স্থাপন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে রিনিউএবল এনার্জি, নির্মাণ এবং টেক্সটাইল খাতে ইতালির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে।


জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতালি প্যারিস চুক্তির একজন সক্রিয় সদস্য এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। তাই জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, সবুজ প্রযুক্তি ও কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসতে পারে।


এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের এলডিসি পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক, জিএসপি প্লাস সুবিধা অর্জন এবং রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কেও ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতালিকে একজন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দেখতে চায় এবং ইউরোপে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করতে এ ধরনের সফরকে বড় সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু ইতালির সঙ্গে নয়, বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের একটি ‘ডোরওয়ে’ পাবে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই সফর বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব বহন করছে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top