ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই উত্তেজনাপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে কয়েকবার সরাসরি যুদ্ধ হয়েছে এবং আজও সীমান্তে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। সামরিক শক্তির দিক থেকে কে এগিয়ে — এ প্রশ্ন বরাবরই আলোচনায় থাকে।
বর্তমানে ভারতের সামরিক বাজেট বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ, যেখানে ২০২৫ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ প্রায় ৭২ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে, পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১১ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতের তুলনায় অনেক কম। এ থেকেই স্পষ্ট যে বাজেট ও সামগ্রিক সামরিক বিনিয়োগে ভারত অনেক এগিয়ে।
সেনা সদস্যের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত এগিয়ে। ভারতের সক্রিয় সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ, যেখানে পাকিস্তানের আছে প্রায় ৬.৫ লক্ষ সক্রিয় সদস্য। রিজার্ভ ফোর্সের ক্ষেত্রেও ভারত এগিয়ে রয়েছে। তবে পাকিস্তান নিজেকে একটি "সর্বদা প্রস্তুত" বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যার বেশিরভাগ অংশই সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন থাকে।
বিমানবাহিনী শক্তির ক্ষেত্রে, ভারতের কাছে রয়েছে প্রায় ২২০০টি সামরিক বিমান, যার মধ্যে আধুনিক রাফালে, সু-৩০ এমকেআই-এর মতো যুদ্ধবিমান রয়েছে। পাকিস্তানের বিমানবাহিনী তুলনামূলক ছোট হলেও তাদের কাছে চীনের তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার এবং আমেরিকার এফ-১৬-এর মতো দক্ষ যুদ্ধবিমান রয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে ভারতের বিমানবাহিনী কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, পাকিস্তান আধুনিকায়নে জোর দিয়েছে।
নৌবাহিনীর শক্তির বিচারেও ভারত এগিয়ে। ভারতের হাতে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, ১৫টি ডেস্ট্রয়ার, ২০টিরও বেশি সাবমেরিন এবং আধুনিক ফ্রিগেট। পাকিস্তানের নৌবাহিনী ছোট হলেও, তারা সম্প্রতি চীন ও তুরস্কের সহযোগিতায় বেশ কিছু আধুনিক সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ যুক্ত করেছে।
পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে দুই দেশই শক্তিশালী। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ১৬০টি, আর পাকিস্তানের রয়েছে প্রায় ১৭০টি। তবে ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতি রয়েছে, যেখানে পাকিস্তান এ নিয়ে তুলনামূলক বেশি আগ্রাসী অবস্থান নেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় ভারত এগিয়ে থাকলেও, পাকিস্তানও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও কৌশলী যুদ্ধকৌশলের মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। উভয় দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন চলমান থাকায়, ভবিষ্যতে সামরিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হতে পারে।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বড় সংঘর্ষ না থাকলেও সীমান্তে উত্তেজনা ও নিয়মিত গোলাগুলি এই লড়াইয়ের বাস্তবতা তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক মহল সবসময় দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানালেও, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক অনিশ্চিত রয়ে গেছে।