১২ টন পানি নিয়ে উড়বে, বিশ্বের বৃহত্তম উভচর বিমান আনছে চীন

News
0

 

চীন বিশ্বের বৃহত্তম উভচর বিমান "AG600" বা “কুনলং” (Kunlong) প্রস্তুত করেছে, যা একসাথে ১২ টন পানি বহন করতে সক্ষম। সম্প্রতি এই বিমানটির উন্নত সংস্করণ "AG600M" সফলভাবে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভারী জল-স্থলযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এই বিমানটি দুর্যোগ মোকাবিলা, বিশেষ করে বনভূমিতে আগুন নেভানো, সামুদ্রিক উদ্ধার অভিযান ও জরুরি পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


AG600M বিমানটি প্রায় ৩৭ মিটার লম্বা এবং এর ডানার প্রসার ৩৮.৮ মিটার। এটি সর্বোচ্চ ২০ টন কার্গো বহন করতে পারে এবং ১২ টন পানি মাত্র ২০ সেকেন্ডে সংগ্রহ করে তা নির্ধারিত স্থানে নিক্ষেপ করতে পারে। এই বৈশিষ্ট্য একে আগুন নেভানোর কাজে অত্যন্ত কার্যকর করে তুলেছে।


বিমানটি জল ও স্থল উভয় জায়গা থেকেই উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে। এটি সাগর, নদী কিংবা হ্রদের পানিতেও নামতে পারে, ফলে দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজ পরিচালনা বা আগুন নেভানো সহজ হবে। এতে রয়েছে চারটি টার্বোপ্রপ ইঞ্জিন, যা একে ৫৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে উড়তে সহায়তা করে এবং এটি টানা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত আকাশে থাকতে পারে।


চীনের রাষ্ট্রীয় বিমান নির্মাতা সংস্থা AVIC (Aviation Industry Corporation of China) জানিয়েছে, AG600 প্রকল্পটি চীনের নিজস্ব বিমান প্রযুক্তি বিকাশের অন্যতম মাইলফলক। বিমানটির প্রাথমিক মডেলটি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো উড়েছিল, তবে নতুন M মডেলটি আরো আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সজ্জিত।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন আগুনের প্রকোপ মোকাবেলায় এ ধরনের বিমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশ ইতোমধ্যেই এই বিমানের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।


চীন AG600M-কে শুধুমাত্র একটি উদ্ধার ও দমকল বিমান হিসেবে না দেখে কৌশলগত দিক থেকেও ব্যবহার করতে চায়। দক্ষিণ চীন সাগরের মতো ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর অঞ্চলে এ বিমান ব্যবহার করে চীন তার উপস্থিতি আরও দৃঢ় করতে পারে বলেও মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।


AG600M উভচর বিমান শুধু প্রযুক্তিগত নয়, চীনের বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top